উত্তর মেরু মানেই বরফে ঢাকা এক দুর্গম এলাকা। সেখানে পৌঁছাতে পারা নিঃসন্দেহে দুর্লভ এক অভিজ্ঞতা। বিশ্ব যুব উৎসবের কল্যাণে সেই অভাবনীয় সুযোগটিই পেয়েছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস বিভাগের শিক্ষার্থী কৌশিক আহমেদ। কৌশিক মূলত উত্তর মেরুর উরাল পর্বত ও আর্কটিক অঞ্চল ভ্রমণ করবেন। রাশিয়ার পরমাণু সংস্থা রোজাটমের একটি আইসব্রেকারে (বরফে ঢাকা পানিপথে চলার জন্য বিশেষ ধরনের জাহাজ) চেপে এই অভিযানে বের হবেন তিনি। পারমাণবিক শক্তিচালিত এমন আইসব্রেকারে উত্তর মেরু ভ্রমণের সুযোগ পেয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যাও কিন্তু খুব কম।
রাশিয়ার সোচি শহরে মূল বিশ্ব যুব উৎসব হয়ে গেল ১-৭ মার্চ। এই উৎসবেই একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল রোজাটম। সারা পৃথিবী থেকে দুই হাজারের বেশি প্রতিযোগী এতে অংশ নেন। কয়েক ধাপে যাচাই-বাছাইয়ের পর মূল পর্বে জায়গা করে নেন ২০ জন। অভিযানে গিয়ে কী করবেন, কী শিখবেন, দেশে ফিরে কী করার পরিকল্পনা—এসবই উপস্থাপন করতে হয়েছে ২০ প্রতিযোগীকে।
কৌশিকের মূল কথা ছিল, ‘বাংলাদেশ সবে পারমাণবিক যুগে প্রবেশ করেছে। এই অভিযান থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা আমি দেশের কাজে লাগাতে চাই। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। উন্নয়নশীল দেশকে উন্নত করতে প্রয়োজন বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং শক্তি-নিরাপত্তা খাতে বিনিয়োগ। সেই লক্ষ্যেই আমি কাজ করতে চাই।’ রুয়েটের এই শিক্ষার্থীর কথা বিচারকদের মনে ধরেছে। সেই সুবাদেই তিনি পেয়ে গেছেন আইসব্রেকারে চেপে অভিযানে যাওয়ার টিকিট।
এখনো মস্কোতেই আছেন কৌশিক। নতুন কিছু দেখছেন, শিখছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে, এ বছরের আগস্টে তিনি অভিযানের জন্য বের হবেন। বিজ্ঞানের শিক্ষামূলক এ অভিযানে আটটি দেশের মোট ১৫ জন প্রতিনিধি অংশ নেবেন। অভিযানের মাধ্যমে উত্তর মেরু এবং পারমাণবিক শক্তি সম্পর্কে জানবেন তাঁরা। নিজ চোখে উত্তর মেরু দেখার জন্য মুখিয়ে আছেন কৌশিক। রাশিয়ার মস্কো থেকে হোয়াটসঅ্যাপে আমাদের জানালেন, ‘উত্তর মেরুতে যাওয়ার সুযোগ সবাই পায় না। আর পেলেও সেটা আর্থিকভাবে অনেক ব্যয়বহুল। এই অভিযান থেকে বিভিন্ন প্রায়োগিক জ্ঞান যেমন অর্জন হবে; মেরু ভল্লুক, মেরুজ্যোতিও দেখতে পারব। আবার দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার বিষয় তো আছেই—এসব ভেবে ভালো লাগছে। আমি ভীষণ রোমাঞ্চিত।’